ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নতুন মুখের ছড়াছড়ি

উপরে রেজাউল করিম, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, জিয়াউদ্দিন চৌধুরী, আমিনুর রশিদ দুলাল, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী,

নীচে মহসিন বাবুল, ফজলুল করিম সাঈদী, আজিমুল হক আজিম, জাহেদুল ইসলাম লিটু ও নুরে হাবিব তছলিম।

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবার দেশব্যাপী আলোচিত হচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সচিব গণমাধ্যমের কাছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেছেন, আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। তার এই ঘোষনার পরপর সারাদেশের মতো কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আমেজ ইতোমধ্যে পরিলক্ষিত হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী বর্তমানে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম একাদশ নির্বাচনে বিপুল ভোটে চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার-১) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সেই কারনে ভোটের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদে আসতে আওয়ামীলীগের প্রথমসারির একাধিক নেতা প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেকে দলের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে মনোনয়ন লুপে নিতে তদবিরও শুরু করেছেন। নির্বাচনে নিজের পক্ষে সমর্থন ও দোয়া চেয়ে মাঠে তাঁরা ভোটারদের মনয়জয়ের চেষ্ঠা করছেন। প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় ও কুশল বিনিময় করে যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এবারের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগে নতুন মুখের ছড়াছড়ি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অন্তত দশজন প্রার্থীর নাম আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। নতুনদের সঙ্গে নির্বাচনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিমও প্রার্থী হবেন বলে শুনা যাচ্ছে। রেজাউল করিম ছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তাঁরা হলেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা আমিনুর রশিদ দুলাল, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাসিয়াখালীর চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি শ্রমিক নেতা আলহাজ ফজলুল করিম সাঈদী, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পশ্চিম বড়ভেওলার চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম লিটু এবং আওয়ামীলীগ নেতা নুরে হাবিব তছলিম।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম ২০০৯ সালের নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম প্রার্থী হন এবং বিজয়ী হন। চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন থেকে পরপর তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি দলের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ ফজলুল করিম সাঈদী দুইবার চকরিয়া পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি পৌরসভার মেয়র পদে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। ওইসময় চকরিয়া উপজেলা ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়ন নেতাদের অনুরোধে দল মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে থেকে তিনি চকরিয়ায় বিএনপি জামায়াতের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে নতুন এমপি জাফর আলমের পর রাজপথে থেকে ভুমিকা রাখলেও বর্তমানে ডালপালা বিহীন আছেন ফজলুল করিম সাঈদী। তৃনমুলে জনপ্রিয়তা যেমন আছে, তেমনি আওয়ামীলীগের সকলস্তরের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি আস্থাভাজন।

অপরদিকে জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বরইতলী ইউনিয়নে দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন পেলেও আওয়ামীলীগের এক নেতা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে থাকায় বিএনপির প্রার্থীর হাতে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান জিয়াউদ্দিন চৌধুরী। জেলা আওয়ামীলীগের অপর সদস্য চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের জনপ্রিয় সাবেক ছাত্রনেতা আমিনুর রশিদ দুলাল আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে উৎপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি অতীতে কোনদিন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ২০১৬ সালে চকরিয়া পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীকে মেয়র পদে নির্বাচিত করতে বেশ ভুমিকা রেখেছেন।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আজিমুল হক আজিম সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন থেকে পরপর তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রয়াত যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হক চেয়ারম্যান তাঁর বড়ভাই। জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ আনোয়ার হোসেন কন্ট্রাক্টর তাঁর মামা।

উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক চকরিয়া উপজেলার ইলিশিয়া জমিদার বাড়ির সন্তান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বর্তমানে মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সালে তিনি পশ্চিমবড় ভেওলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আগেও তিনি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

চকরিয়া উপজেলায় ছাত্র রাজনীতিতে পরিচিত মুখ মহসিন বাবুল। বর্তমানে তিনি মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনি প্রার্থী হবে বলে নিশ্চিত করেছেন। অবশ্য ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা জাহেদুল ইসলাম লিটু ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলার ৭নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পরে সকল সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে তিনি জেলা পরিষদের এক নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি পৌরসভার কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি চকরিয়া পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। সদা হাসোজ্জল তরুন জননেতা জাহেদুল ইসলাম লিটু এবার সুযোগ পেলে বড়পরিসরে জনসেবা করতে চান।

সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে আছেন আরো একজন। তিনি হলেন বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ ও বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ আবদুল হান্নান বিএ’র ছেলে তরুন আওয়ামীলীগ নেতা নুরে হাবিব তছলিম। তিনি ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনেও প্রার্থী হতে চেষ্ঠা করেন। কিন্তু দলীয়ভাবে জাফর আলমকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষনা দেয়ায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এবারও তিনি প্রার্থী হচ্ছেন। তবে তাঁর কথা প্রার্থী হওয়ার চেয়ে আগে দরকার দলের মনোনয়ন। চেষ্ঠা করে যাব, দলের মনোনয়ন পেলে অবশ্যই ভোটের মাঠে নামব। তছলিমের ছোটভাই নুরে হোছাইন আরিফ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি। ছিলেন বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক সকলেই এবার রাজনীতির মাঠের পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়েছেন। তাঁরা দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একাদশ নির্বাচনে চকরিয়া-পেকুয়া আসনে নৌকার বিজয় ঘরে তুলতে আওয়ামীলীগের প্রার্থী জাফর আলমের পক্ষে দিনরাত কাজ করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতার ৪৫বছর পর এ আসনে বিজয়ের মুখ দেখেছে আওয়ামীলীগ। দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিজয় নিশ্চিত তা প্রমাণ করেছেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে নতুন সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহনের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন এমপি আলহাজ জাফর আলমের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এসব নেতাদের সঙ্গে সুসর্ম্পক রয়েছে। আছে ঐক্যমত। তবে এখন দেখার বিষয় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন প্রাপ্তি তিনি কার পক্ষে সায় দিচ্ছেন। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ধারণা, নতুন এমপি আলহাজ জাফর আলম এখন সম্ভাব্য প্রার্থীদের সামনের তুরোপের তাজ। তিনি যাকে সমর্থন দেবেন তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন। নির্বাচনে তিনিই বিজয়ী হবেন এটি শতভাগ।

তবে আওয়ামীলীগের তৃনমুলের নেতাকর্মীদের দাবি, এবারের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে টাকার বিনিময়ে দলের মনোনয়ন দেওয়ার বদলে দুঃসময়ে আওয়ামীলীগের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন, জনগনের কাছে গ্রহনযোগ্যতা আছে এ ধরণের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হোক। যারা দলের এবং বিভিন্নভাবে দায়িত্ব থেকে সুফল পেয়েছেন তাদের বদলে যারা দীর্ঘদিন ধরে দলের কাছে বঞ্চিত হয়েছেন তাদেরকে মুল্যায়ন করা হোক।

পাঠকের মতামত: